ব্লগ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে আয় করতে চান? সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)শিখুন।

 


আমি টেকলি৪২০-এ বেশ অনিয়মিত। ফেসবুকে সামির ভাইয়ের লিংকটা পেয়ে অনেকদিন পর আজকে ঢু মারলাম। বিভিন্ন পোস্ট ঘুরতে ঘুরতে অনলাইন আয় সম্পর্কিত জরিপের রেজাল্টটা চোখে পড়লো। ওখানকার টিউমেন্টে দেখলাম অনেকে অনেক কথা লিখেছেন। অনেককে দেখলাম অনেক হতাশ। কেউ কেউ ব্যাপারটা সম্পর্কে এখনো আগ্রহী।কেউ বলছেন আমার ব্লগগুলাতে ভিজিটার নাই। কেউ বলছেন ক্লিক পড়ে না, এমন আরো অনেক। আমি যেহেতু ব্যপারটা নিয়ে অনেকদিন যাবত কাজ করছি এবং অনেক পড়াশুনা করেছি; ভাবলাম কিছু শেয়ার করে যাই।

বাংলাদেশে যেহেতু PayPal নেই সেহেতু বরাবরই আমার টার্গেট ছিল গুগল এডসেন্স নিয়ে কাজ করা। অনলাইনে আয় করার অনেক পথ আছে। তবে, আমার মতে গুগল এডসেন্সই ঝামেলাহীন, সন্দেহহীন একটা পথ এবং বাংলাদেশীদের জন্য বেশ উপযুক্ত। আজকে গুগল এডসেন্স আরম্ভ করার আগে; বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো এবং তা হবে সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন বা সংক্ষেপে এসইও বিষয়ক। কারন এসইও ছাড়া এডসেন্স আসলে অচল। প্রফেশনাল ব্লগিং এরকম একটা জিনিস, যেখানে আপনাকে একটা ভিজিটর ম্যনেজ করতে হবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের সাথে প্রতিযোগিতা করে। আশানুরুপ ভিজিটর পেতে চাইলে অবশ্যই সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা উচিত।কারন ভিজিটর না থাকলে এডসেন্সের কথা ভাবা বোকামী। আপনার সাইটে ভিজিটররা না আসলে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে কে?

এসইও নিয়ে প্রচুর ই-বুক পড়েছি আমি। বেশ কতগুলা ভিডিও টিউটোরিয়ালও দেখেছি এবং তা নিজের ব্লগগুলাতে কাজে লাগিয়েছি। এখন পর্যন্ত বলা চলে, আমি মোটামুটি সফল। কিন্তু, প্রতিনিয়তই শিখছি।

আমার শিক্ষালব্ধ জ্ঞান থেকে মূল এবং কার্যকরী কতগুলা বিষয় নিয়ে নিচের স্টেপগুলা সাজালাম। ব্যাপারগুলা নিয়ে অনেক বাংলা ব্লগেই অনেক আলোচনা করা হয়েছে। তবে ঘুড়েফিরে মূল কথা হচ্ছে এই কয়টাই।

সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন বা SEO কি?

এস. ই. ও হচ্ছে একটি পদ্বতি যার মাধ্যমে বিভিন্ন সার্চ ইন্জিন যেমন গুগল, ইয়াহু বা বিংয়ের বিভিন্ন আভ্যন্তরীন প্যারামিটারগুলি ব্যবহার করে একটি ওয়েবসাইট বা এর কোন একটি পেজকে সার্চ ইন্জিন রেজাল্ট পেজে কত উপরে, কত নাম্বারে বা তা কত ভালো দেখাবে তা নিশ্চিত করা যায়। সাধারনত দুই ধরনের এস ই ও রয়েছে। ১. অনপেজ সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন, ২. অফ পেজ সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন।

এস ই ও এর কতগুলি বেসিক জিনিস আছে যেগুলি প্রত্যেকটা ব্লগারের জন্য জানা আবশ্যিক। নিচে সংক্ষিপ্তভাবে তা আলোচনা করতে চেষ্টা করবো।

১। লেখার উন্নত মান (Unique & Quality Content):

এর চেয়ে বড় এস. ই. ও. কিছুই হতে পারে না। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি- আপনি যদি এসইও সম্পর্কে কিছু নাও জানেন, কিন্তু নিয়মিত খুব ভালো লিখে যেতে পারেন তবে আপনার ব্লগ বা পোস্টের কোন এসইও দরকার পড়ে না। উন্নত লেখা নিজেই একটা এসইও। নিয়মিত ভালো এবং অনন্য লেখা লিখে যেতে পারলে সার্চ ইন্জিন সমূহ নিজে থেকেই আপনার ব্লগটা চিনে নিবে এবং রেজাল্ট পেজে প্রথম দিকে রাথবে। মনে রাখবেন, সার্চ ইন্জিনগুলা এতটা বোকা নয় যে প্রচুর অযাচিত কীওয়ার্ড দিয়ে বানানো একটা লেখাকে সার্চ ইন্জিনে প্রথম দিকে স্থান দিয়ে নিজের ইমেজ নষ্ট করবে। আপনি নিজেকে একজন সাধারন ভিজিটর হিসেবে চিন্তা করুন। মনে করুন কোন একটা সমস্যায় পড়েছেন এবং গুগলে সার্চ দিলেন। গুগল আপনাকে কোন ব্লগ বা ওয়েবসাইটের কয়েকটা লিংক দিলো যেগুলাতে গিয়ে দেখলেন - লেখাটি লিখা হয়েছে প্রচুর অনাকাংখিত রিপিটেড কীওয়ার্ড দিয়ে, যার ফলে লেখাটির ভিতর থেকে মূল কথাটিই খুজে বের করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আপনি নিশ্চয়ই তখন গুগলের উপর বিরক্ত হবেন!!! সার্চ ইন্জিনগুলোও এ কথাটি জানে। অযাচিত কীওয়ার্ড দিয়ে আপনি হয়তো প্রথমদিন রেজাল্ট পেজে আসতে পারবেন, কিন্তু খুব দ্রুতই আবার হারিয়ে যেতে হবে।

তার চেয়ে বরং নিয়মিত ভালো লিখুন। আপনার লেখা রেজাল্ট পেজে স্থায়ী হবে এবং তুলনামুলকভাবে লাভবান হবেন বেশী।

২। কী-ওয়ার্ড (Keyword):

কীওয়ার্ড হচ্ছে একটি অর্থবোধক শব্দ যা মানুষ সার্চ ইন্জিনের সার্চ বক্সে টাইপ করে নির্দিষ্ট কোন তথ্য খুজে বের করার জন্য। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে যা দেখেছি- মানুষ খুব কম সময়ই একটি মাত্র শব্দ দিয়ে সার্চ করে। বরং মানুষ এখন অনেক বেশী স্পেসিফিক তথ্য চায়। এজন্য তারা গ্রুপ কী-ওয়ার্ড (Phrase Keyword) ব্যবহার করে। এজন্য আপনি যদি “ডিজিটাল ক্যামেরা” কী-ওয়ার্ড না দিয়ে যদি “ক্যাননের ডিজিটাল ক্যামেরা” কীওয়ার্ডটি ব্যবহার করেন তাহলে অনেক ভালো ফল পাবেন। এক্ষেত্রে আরেকটি সুবিধা হলো- আপনার Global Competitor কমে যাবে ফলে খুব সহজেই রেজাল্ট পেজের প্রথম দিকে স্থান পাবেন।

৩। আভ্যন্তরীন লিংক বিন্যাস (Internal Link Building):

আমার কাছে এ ব্যাপারটা বেশ ফলপ্রসু মনে হয়েছে। আপনি যদি বিখ্যাত তথ্যভিত্তিক সাইট “উইকিপিডিয়া” ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জানেন যে বিভিন্ন সার্চ ইন্জিনে তাদের স্থান বরাবরই প্রথম। তাদের আভ্যন্তরীন লিংক বিন্যাসটা খেয়াল করেছেন? এক কথায় অসাধারন। আপনি কেনই বা এ ট্রিকসটা ব্যবহার থেকে দূরে থাকবেন? Internal Linking যেমন একটি পেজ আরেকটি পেজকে ব্যকলিংক দেয় তেমনি সার্চ ইন্জিন রোবটকে প্ররোচিত করে এক লিংক থেকে আরেক লিংকে জাম্পিং করে ইন্ডেক্স করার জন্য। আর নতুন লেখার সাথে সমজাতীয় পুরনো লেখার লিংকিং এর কারনে সবগুলো পেজই সার্চ ইন্জিনের নখদর্পনে থাকে যা আপনার ব্লগের রেংক বাড়ানোর ক্ষেত্রে দারুন সহায়ক।

৪। বিভিন্ন ট্যাগ এবং মেটার উপযুক্ত ব্যবহার (Using Meta & Different Tags):

প্রত্যেকটা ব্লগারের এই স্টেপটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা জরুরী। পোস্ট টাইটেল অবশ্যই H1 এবং পোস্টের সাব হেডিং বা পয়েন্টগুলা H2 ট্যগের ভিতর রাখতে হবে। তবে সার্চ ইন্জিনগুলা H1 ট্যাগটাই গুরুত্ব দিয়ে দেখে। পোস্ট ইমেজ ব্যবহার করুন এবং পোস্টটি যে কীওয়ার্ডটির উপর ভিত্তি করে লিখেছেন, সেই কীওয়ার্ডটি ইমেজের Alt Tag এ বসিয়ে দিন। পোস্টের টাইটেল ট্যাগে ইংরেজী And, Or, &, The এই শব্দগুলি পরিহার করে ভালো কীওয়ার্ড সমৃদ্ধ ৬০ শব্দের মধ্যে একটি বাক্য বসিয়ে দিন। মেটা ডেসক্রিপশন হতে হবে ১৬০ শব্দের মধ্যে এবং এক্ষেত্রে কীওয়ার্ডটি বাক্যের শুরুতেই বসাবার চেষ্টা করুন।

৫। মার্কেটিং (Marketing):

এটা অফলাইন এস. ই. ওর একটি অংশ। সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে বিভিন্ন সোসাল নেটওয়ার্ক যেমন ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন এবং বুকমার্কিং সাইট যেমন ডেলিশাস, ডিগ, রেডিট ব্যবহার করে ব্লগ বা ওয়েবসাইটের প্রমোট করাকেই মার্কেটিং বোঝায়। আর্টিকেল সাবমিশন এবং টিউমেন্টিং করাও মার্কেটিং এর একটি অংশ। একটি পোস্ট লিখার পর উপরোক্ত মার্কেটিং সাইটগুলা ব্যবহার করে আপনার লিংক সাবমিট করুন।

এই হলো সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশনের বেসিক বিষয়। একটি পোস্ট লেখার সময় উপরোক্ত বিষয়গুলা মাথায় থাকলে আপনার সাইট হবে Well-Optimized.  ফলে দ্রুত ভালো পরিমান ভিজিটর পেতে শুরু করবেন। আর একটা জিনিস মনে রাখবেন; বেশী ভিজিটর = বেশী ক্লিক = বেশী আয়। অতএব এডসেন্স নিয়ে ভাবার আগে, কিভাবে ব্লগ বা সাইটে ভিজিটর আনা যায় সেটা নিয়ে ভাবুন।

আজকে এসইও নিয়ে লিখলাম। অন্য একদিন এডসেন্স নিয়ে (এডসেন্স প্লেসমেন্ট, এডসেন্স অপটিমাইজেশন) খুটিনাটি অনেক কিছু লিখবো।

  • A+
  • A-